বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া। ২০২১ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলারের সোনা উৎপাদন করেছে দেশটি। যা বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ।
ইউক্রেনে অভিযান শুরুর পর রাশিয়ার ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দেয় পশ্চিমা দেশগুলো।এবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জি-৭ জোটের কিছু সদস্যদেশসহ বিশ্বের নেতৃস্থানীয় অর্থনৈতিক ক্ষমতাধর কিছু রাষ্ট্র রাশিয়া থেকে সোনা আমদানি নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করছে। খবর আল-জাজিরার।
গত ১৯ জুলাই আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মাসে বাভারিয়ায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে প্রস্তাবটি প্রথম উত্থাপিত হয়েছিল। এই নিষেধাজ্ঞা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও জাপান তা যাচাই বাছাই করে দেখছে।
যুক্তরাজ্যে সোনা ও রুপার বারের বাজারের প্রতিনিধিত্বকারী বাণিজ্য সমিতি লন্ডন বুলিয়ন মার্কেট অ্যাসোসিয়েশন (এলবিএমএ) এক বিবৃতিতে আল-জাজিরাকে জানায়, ‘রাশিয়ার পরিশোধিত সোনার বারের গায়ে ছাপ ও তারিখ থাকে, তাই সহজেই এগুলো শনাক্ত করা সম্ভব। ২৪ জুন থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা রাশিয়ার নতুন সোনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তবে এ তারিখের আগে পরিশোধিত এবং অন্য দেশে রক্ষিত রাশিয়ার সোনার ওপর এটি প্রযোজ্য নয়’।
এরই মধ্যে লন্ডন মার্কেটে অনানুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ান সোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। কারণ, এলবিএমএ গত মার্চে তাদের তালিকা থেকে রাশিয়ার সোনা পরিশোধনকারীকে বাদ দিলে বেশির ভাগ ক্রেতা সোনার ব্যবসা বন্ধ করে দেন।
এ বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য যখন নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছিল, তখন বরিস জনসনের সরকার দাবি করেছিল, ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ রাশিয়ার ধনীদের কাছে সোনা রপ্তানি মূল্যবান হয়ে উঠেছে। তারা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সোনার বারের বাজারে ঝুঁকে পড়েছে।
এ বিষয়ে বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব অর্থনৈতিক কারণের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক হতে পারে। কারণ, ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার সোনার বাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
পলিস রাশিয়ার বৃহত্তম সোনা উৎপাদনকারী কোম্পানি। রাশিয়ার সোনার খনি মূলত দেশের বাজারে ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে সোনা বিক্রি করে। পরে এগুলো মস্কোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা করা হয় বা রপ্তানি করা হয়। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার পেছনের কারণগুলো হলো, রাশিয়ার খনি কোম্পানি, ব্যাংক, এমনকি ধনাঢ্য ব্যক্তিরা যাতে সোনা বিক্রি করে ডলার, ইউরো বা পাউন্ডের মতো হার্ড কারেন্সি আয় করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা। এসব পদক্ষেপের লক্ষ্যই হলো রাশিয়ার প্রধান আয়ের উত্স সীমিত করে যুদ্ধের সক্ষমতা দুর্বল করে দেওয়া।
জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক পরিসংখ্যান ডেটাবেজ কমট্রেডের তথ্যমতে, গত দশকে রাশিয়ার সোনার সিংহভাগ গিয়েছে যুক্তরাজ্যে। বিশ্বে সোনা-রুপার বারের সবচেয়ে বড় বাজার হচ্ছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্য গত বছর ১৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সোনা আমদানি করে।
কমট্রেডের তথ্যমতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়া সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, কাজাখস্তানসহ বেশ কিছু দেশে সোনা বিক্রি করেছে।